রাজা গোবিন্দ ও বোরহান উদ্দিনের ইতিহাস প্রসিদ্ধ কাহিনী

লিখেছেন লিখেছেন এমএ হাসান ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৩৯:০৮ দুপুর

সিলেটের টুলটিকর

মহল্লায় তখন কয়েকটি মুসলমান পরিবার বাস

করতেন। এলাকাটি ছিল শ্রীহট্টের গৌড়

রাজ্যের অংশ। গৌড়-গোবিন্দ এই এলাকায়

রাজত্ব করতেন। এ রাজ্যের অদূরেই ছিল কামরূপ

কামাক্ষা। ফলে জাদুবিদ্যা সবাই চর্চা করত।

রাজা ছিলেন এতে খুব পারদর্শী। তার রাজ্যে গরু

জবাই করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বুরহান উদ্দীন

নামক একজন মুসলিম নিজ পুত্রের জন্মের জন্য

মানত উপলক্ষে গোপনে গরু জবাই করেন। এর

একটি মাংসের টুকরা কাক ছো মেরে নিয়ে যায়।

আর সেটা গোবিন্দের রাজ

দরবারে নিয়ে ফেলে দেয়। কাকের এ কান্ডেই শুরু

ইসলামের ইতিহাসের এককেটি পর্বের। গৌর

গোবিন্দ গরু জবাইকারী বোরহান

উদ্দিনকে খুজেঁ বের করেন। তিনি বোরহান

উদ্দিনের হাত কেটে দেন আর শিশু

পুত্রকে হত্যা করেন। বোরহান উদ্দিন এ

নিষ্ঠুরতায় সিলেট ত্যাগ করে বাংলার তৎকালীন

রাজা শামস উদ্দীন ফিরোজ শাহের নিকট

গিয়ে এই নিষ্ঠুর হত্যা কান্ডের অভিযোগ

করে এর বিচার প্রার্থনা করেন। ফিরোজ শাহ

তার ভাগ্নে সিকান্দর

গাজীকে অভিযানে পাঠালেন। শাহী সৈন্য যখন

ব্রহ্মপুত্র নদী পার হতে চেষ্টা করে তখনি গৌর

গোবিন্দর সৈন্যরা ঐন্দ্রজালিক অগ্নীবাণ

নিক্ষেপ করে সমস্ত চেষ্টাকে বিফল করে ফেলে।

সিকান্দর গাজীর ব্যর্থতা দিল্লীর সম্রাট

আলাউদ্দীন খিলজীর কাছে পৌছে যায়। এসময়

হযরত শাহজালাল রা. হযরত নিযাম উদ্দিন

আউলিয়ার অতিথি হয়ে দিল্লী অবস্থান

করছিলেন। বুরহান উদ্দীন তার সাথে সাক্ষাত

করে গৌর গোবিন্দর অত্যাচারের বর্ণনা দেন।

ফলে চূড়ান্ত অভিযানে হযরত শাহজালাল রা.

তাদের সংগী সঙ্গী হতে মত দেন।

অন্যদিকে হযরত শাহ জালাল রা. দিল্লী আসার

পেছনেও আধ্যাত্মিক গল্প রয়েছে। শাহ জালাল

রা. তাঁর মামা ও গুরু সৈয়দ আহমদ কবিরের

দরবার আরব দেশে ছিলেন। তার

পরিবারটি বংশানুক্রমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ

করে কামেলিয়ত অর্জন করেছিলেন। এসময়

হযরত শাহজালাল রা. এর বিভিন্ন কারামত তার

মামার সামনে প্রকাশ পেতে থাকে। তার

মামা শাহ জালালেরর হাতে পবিত্র মক্কার এক

মুঠো মাটি তুলে দিয়ে বললেনঃ যে স্থানে এই

মাটির "স্বাদ" "গন্ধ" ও "বর্ণের" মিল এক হবে,

সেখানেই ধর্ম প্রচারের জন্য আস্তানা গাড়বে।

ধর্ম প্রচারের এ অভিযানে মক্কা শরিফ

হতে তিনি একা একাই যাত্রা শুরু করেন।

পথে বিভিন্ন স্থানে যাত্রা বিরতি করলে অনেক

মানুষ তার মুরীদ হয়ে যান। এদের মধ্যে ৩৬০ জন

শিষ্য তার সংগী হন। এরা প্রত্যেকেই

পরে কামালিয়ত লাভ করেছিলেন। এদেরই মাজার

পুরো সিলেট জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।

কথিত রয়েছে, দিল্লী পৌছে হযরত শাহজালাল

রা. হযরত নিযাম উদ্দিন আউলিয়ার

সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি তার

সংগে সাক্ষাতের জন্য মনস্থির করেন। হযরত

শাহজালাল রা. একটি পাত্রের মধ্যে জলন্ত

আঙ্গার দিয়ে তার মধ্যে তুলা রেখে হযরত নিযাম

উদ্দিন আউলিয়া রা. এর দরবারে পাঠান। নিযাম

উদ্দিন আউলিয়া রা. পাত্র খুলে দেখলেন,

জলন্ত আংগার তুলাকে স্পর্শ করেনি।

এতে তিনি অভিভূত হন এবং হযরত শাহ জালাল

রা. কে তার

দরবারে অতিথি হিসেবে সাদরে গ্রহণ করেন।

হযরত শাহজালাল রা. কে একজোড়া কবুতর

উপহার দিলেন হযরত নিযাম উদ্দিন

আউলিয়া রা. । ওই কবুতর নিয়েই শাহজালাল

রা. সিলেটের অভিমুখে সৈন্যদের সংগে যোগ

দেন। মাজারের এসব জালালী কবুতর ওই

কবুতরেরই বংশধর। আজও এ কবুতর কেউ

হত্যা করে ভক্ষণ করেননা। গৌর গোবিন্দ

হযরত শাহ জালাল রা. এর আাগমনের

কথা জানতে পেরে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেন।

ব্রহ্মপুত্র নদীসহ আশপাশের নদীতে যত ধরনের

জলযান ছিল তা সব আটক করে পুড়িয়ে দেন।

ফলে মুসলিম সৈন্য নদীর পাড়ে এসেই

থেমে গিয়েছিল। প্রাচীন গ্রন্থ

তোয়ারিখে জালালীতে হযরত শাহজালালের

নামাজের মাসাল্লায় নদী পার

হয়ে কিভাবে সিলেট পৌছেন তার

একটি বর্ণনা রয়েছে।

এপারে হজরত তার লস্কর সহিতে

আসিয়া পৌছিলা এক নদীর পারেতে

বরাক নামে নদী ছিল যে মসুর

যাহার নিকট গ্রাম নাম বাহাদুরপুর।

যখন পৌছিলা তিনি নদীর কেনার

নৌকা বিনা সে নদীও হইলেন পার।

গোবিন্দর কোন জাদুমন্ত্রই কাজে আসেনি।

তিনি অগ্নিবান নিক্ষেপ করলেও

তা বুমেরাং হয়ে তার প্রসাদের ওপর

গিয়ে পড়তে থাকে। এই এলাকায় তখনও অনেক

পাথর পাওয়া যেত। গোবিন্দ সর্বশেষ

চেষ্টা হিসেবে পাথর দিয়ে যাত্রাপথে ব্যারিকেড

দিলেন। শাহজালাল রা. পাথরের

সামনে গিয়ে বললেন, সিল হট। অর্থ্যাৎ পাথর

সরে যাও। এ সিলহট থেকেই আজকের সিলেট

নামকরণ

করা হয়েছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেছেন।

বিফল গৌর গোবিন্দ সিলেট ছেড়ে পালালেন।

এই টিলাতেই তার রাজ প্রাসাদ ছিল

বলে দাবী করেছেন- শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত এর

লেখক অচ্যুতচরণ চৌধুরী। এখানেই হযরত

শাহজালাল রা. অবস্থান নিলেন। একদিন তার

মামার দেয়া মাটি বের করে দেখলেন, মক্কার

মাটির সংগে এ মাটির হুবহু মিল। ফলে গুরুর

আদেশ মতে বাকি জীবনটা ইসলাম প্রচারের

জন্য এখানেই কাটিয়ে দিলেন এই মহান

আধ্যাত্মিক পুরুষ। ধর্মের পথে জীবন উৎসর্গ

করেছেন বলে তার আর বিয়ে করা হয়নি। একজন

উর্দ্দু কবি বলেছেন, লাখো কোশিশ

ছে কেয়া হোতা হ্যায়? ওহি হোতা হ্যায় যু

মানজুরে খোদা হোতা হ্যায়। লাখো চেষ্টায়

কি আর হয়ে থাকে, সেটাইতো তো হয়

খোদা যা লিখে রাখে। আজ সিলেটের অসংখ্য

মসজিদে আজানের ধ্বনি শুনতে পেলাম। প্রথম

আজানটি তার সিলেট জয়ের পরই দেয়া হয়েছিল।

বিঝয়ের পর তিনি সিলেটবাসীদের কর মওকুফ

করে দিলেন। সিলেটের অতিরিক্ত

জেলা প্রশাসক সার্বিক মো. মিজানুর রহমান

জানালেন, এ কারণেই তার প্রতি সম্মান

দেখিয়ে প্রশাসন হযরতের মাজার এলাকাকেও

করমুক্ত রেখেছে। আরবের মাটির সংগে সিলেটের

মাটির মিল রয়েছে বলেই হয়ত এ এলাকায় এত

তেল এত গ্যাস।

কাজী সায়েমুজ্জামান, সিলেট, ২৫/০২-২০১২

বিষয়: বিবিধ

১০১৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File